ঘোর লাগা অদ্ভুত এক সময়ে বাস আমাদের। খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে আমাদের আশেপাশের পরিবেশ, সঙ্গে সঙ্গে চেনা মানুষগুলো। এতদিনের জেনে আসা সবকিছু মুহূর্তেই হয়ে উঠছে অচেনা। যে বিষয়গুলোকে এতদিন ঘুষ বলে জেনেছি তা কোথাও হয়ে উঠছে ‘স্পিড মানি’, কোথাও হয়ে উঠছে ‘তদবির খরচ’। ন্যায়-অন্যায় বোধের দোলাচলে এখন আমরা এতটাই দ্বিধান্বিত যে, আলো কোনটা আর অন্ধকার কোনটা তা বোঝা আমাদের জন্য কষ্টকর। এখন তো এমন অবস্থা যে অন্ধকারকেই আলো বলে ভুল হয়। সততার আলো এখন আমাদের চোখ ঝলসে দেয়, বাদুড় পেঁচার মতো রাতের অন্ধকার আমাদের জন্য বেশি আরামদায়ক। সততা এখন করোনায় আক্রান্ত, একটু নিঃশ্বাসের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে করছে।
মানব জীবনের অদ্ভুত এক দিক হলো আমাদের প্রত্যেকের নীতি নৈতিকতা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। শৈশব ও কৈশোরে আমরা যে আর্দশকে লালন করে বেড়ে উঠি, কঠিন বাস্তবতা প্রতিনিয়ত তার পরীক্ষা নেয়। এ যেন ভেঙে গড়ার এক অদ্ভুত খেলা। জীবনটাকে মাঝে মাঝে মনে হয় ‘চামুচে মার্বেল’ দৌড়ের প্রতিযোগিতার মতো। এখানে শুধু মার্বেলের পরিবর্তে চামুচে রয়েছে আমাদের সততা। খুব সাবধানে আমরা কেউ কেউ দৌড়াচ্ছি তারপরও একটু একটু করে আমাদের সততা চামুচের ফাঁক গলে পড়ে যাচ্ছে। যদিও এ বিষয়টি কেউ কেউ একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। আবার কেউ প্রতি মুহূর্তে নিজেকে হারাবার বেদনায় পুড়ছে।
আমাদের শিক্ষাঙ্গন যা কিনা হওয়ার কথা ছিল নৈতিকতা তৈরির কারখানা, তা নিজেই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে শিক্ষক নিয়োগে দলবাজি আর ‘তেলবাজি’র কাছে মেধা ও মেরুদণ্ড পরাজিত। আর স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগে অর্থ অথবা তদবির ঠিক করে দিচ্ছে কারা আমাদের শিশুদের ন্যায়নীতির পাঠ পড়াবে। এ অবস্থায় যে শিক্ষকের নিয়োগই হচ্ছে অসততার মাধ্যমে, তার কাছে ছাত্র -ছাত্রীরা অন্যায়ের সামনে নতজানু হওয়া ছাড়া আর কী শিখতে পারে?